উল্লেখযােগ্য বিপ্লব : ( Important Revolutions )
১. সবুজ বিপ্লব ( Green Revolution ) : ১৯৬৮ সালের ৮ ই মার্চ United States Agency for Interna tional Development ( USAID ) এর তৎকালীন অধিকর্তা William S. Gadd সর্বপ্রথম ‘ Green Revolu tion ' কথাটি ব্যবহার করেন । তবে সবুজ বিপ্লব বলতে উচ্চফলনশীল বীজ এবং অন্যান্য উপকরণকে কাজে লাগিয়ে কৃষিজ শস্যের ফলন অস্বাভাবিক দ্রুত বাড়িয়ে তােলাকে বােঝায় । এটি শুরু হয়েছিল ১৯৬০ - এর দশকের শেযে Dr. Norman Earnest Borlaug এবং Dr. Hassan এর নেতৃত্বে মেক্সিকোয় । ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সহায়তায় নতুন প্রযুক্তি ও উন্নত বীজ ব্যবহারের ফলে ভারতীয় কৃষির আমূল পরিবর্তন ঘটে । তারপরের ত্রিশ . বছরে দেশের খাদ্য উৎপাদনের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয় । নব্বইয়ের দশকে খাদ্য উৎপাদন দাঁড়ায় ১৯৪৭ এর চারগুণ বেশি । তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৬১-৬৬ ) ভারতে সবুজ বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।
২. দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব ( Second Green Revolution ) : প্রথম সবুজ বিপ্লবের কেবলমাত্র ভারতের কয়েকটি রাজ্যে সীমাবদ্ধতা , দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয় । ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিং ও প্রথম সবুজ বিপ্লবের খপতি এবং National Commission on Farmer এর সভাপতি এম . এস . স্বামীনাথন ( ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক ) দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলি উল্লেখ করেন । ( ক ) মাটির উর্বরতা বাড়ানাে , ( খ ) জলের সুথায়ী ও সম ব্যবহার ( গ ) সুলভ ঋণের ব্যবস্থা , শস্য এবং জীবন বীমার সংস্কার , ( ঘ ) উন্নত প্রযুক্তি ও সুবিধার প্রসার ঘটানাে ( ঙ ) পরিকাঠামো গঠন এবং কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ , ( চ ) বীজ উন্নয়নে বিজ্ঞান ও জৈবপ্রযুক্তির প্রয়ােগ , ( ছ ) পশুপালন ব্যবস্থার উন্নয়নে বিজ্ঞানের ব্যবহার । একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের ওপর জোর দেওয়া হয় ।
৩. চিরসবুজ বিপ্লব ( Evergreen Revolution ) : ভারতের সবুজ বিপ্লবের প্রবর্তক , ন্যাশনাল কমিশন অন ফারমারস ’ National Commission on Farmers ) - এর সভাপতি ড : এম এস স্বামীনাথন ভারতে বর্তমান খাদ্যশস্যের উৎপাদন ( ২১০ মিলিয়ন টন ) দ্বিগুণ করার ( ৪ ২০ মিলিয়ন টন ) লক্ষ্যে তাবার নতুন করে ‘ চিরসবুজ বিপ্লবের ডাক দেন । এই বিপ্লবকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য তিনি সর্বোৎকৃষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও জৈব কৃষি ব্যবহারের উপর জোর দেন । এছাড়া তিনি আরাে চারটি বিষয়ের উপর জোর দেন— ( ১ ) মাটির উর্বরতা বাড়ানাে , ( ২ ) বৃষ্টির জলের সংরক্ষণ আবশ্যিক করা ( Making rainwater harvesting compul sory ) , ( ৩ ) সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণদান ( Providing credit to farmers on suitable condition ) , ( ৪ ) পরীক্ষাগার থেকে জমি শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়ােজন ( Promoting lab to land exhibitions ) ।
৪. শ্বেত বিপ্লব ( White Revolution ) : ১৯৭০ সালে জাতীয় দুধ উন্নয়ন পর্ষদ ’ ( Natioanl Dain Devel opment Board ) কর্তৃক দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ' Opcation Flood ' নামক একটি কর্মসূচী নেওয়া হয় । এই কর্মসূটীতে গৃহীত পদ্ধতি দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটায় যা শ্বেত বিপ্লব ' নামে পরিচিত । এই সাফল্যের স্থপতি ছিলেন ড : ভার্গিস কুরিয়েন যিনি শ্বেত বিপ্লবের জনক ’ ( Milkman of India ) নামে পরিচিত । এই বিপ্লব মূলত চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৬৯-৭৪ ) ঘটে ছিল । এই বিপ্লবের মােট তিনটি পর্যায় আছে , যথা—
( ক ) অপারেশন ফ্লাড- L ( ১৯৭০ -৭৯ ) : এই পর্যায়টি ১৯৭০ সালে শুরু হয়েছিল । এই পর্যায়ে ভারতের দশটি রাজ্যে জাতীয় ভেয়ারি উন্নয়ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল । এবং চারটি বড় বড় শহর , যথা — দিল্লি , কলকাতা ও চেন্নাই - এ মাদার ডেয়ারি স্থাপিত হয়েছিল । মুম্বাই ,
( খ ) অপারেশন ফ্লাড- II ( ১৯৮০-৮৫ ) : এই পর্যায়ে ১৪৪ টি শহরে দুধ বাজার স্থাপন , পশুরােগ নিরাময়ের বন্দোবস্ত , উন্নত প্রজাতির পশু সরবরাহ এবং মিল্কম্যানদের নানান সুযােগ - সুবিধা প্রদান ইত্যাদি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল ।
( গ ) অপারেশন ফ্লাড- III ( ১৯৮৫-৯৪ ) : ভারতের ২২ টি রাজ্যের ২৫০ টি জেলায় ১৭০ টি দুগ্ধভাণ্ডার স্থাপন করা হয়েছিল । এর দ্বারা ৬৫,০৯২ টি দুগ্ধ কো - অপারেটিভ সােসাইটির ৮৩-৫ লক্ষ পশুপালক উপকৃত হয়েছিল । অপারেশন ফ্লাডের ফলে মাথাপিছু দুধের উৎপাদন ১৯৫০-৫১ তে ১২৪ গ্রাম / দিন থেকে বেড়ে ২০০৪-০৫ তে ২৩২ গ্রাম / দিনে পৌঁছায় ।
৫. হলুদ বা পীত বিপ্লব ( Yellow Revolution ) : সবুজ বিপ্লবের পর পরই সংঘটিত হয় হলুদ বিপ্লব । হলুদ বিপ্লব তৈলবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা পুরণের সঙ্গে সম্পর্কিত । বর্তমানে ভারতে ২৩ টি রাজ্যের ৩৩৭ টি জেলা তৈলবীজ উৎপাদন প্রােগ্রামের সঙ্গে জড়িত । ভারতে হলুদ বিপ্লব তৈল বীজের ও ভােজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধিকে সুনিশ্চিত করে । ১৯৮০'র দশকে ভারতে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ঘটেছিল পীত বিপ্লব । এটি ছিল বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় উষ্ণ ( Semi arid ) , আধা - অনুর্বর অঞ্চলে তৈলবীজ উৎপাদনের এক বিশেষ উদ্যোগ । এর ফলে ওই অঞ্চলগুলিতে চাষের ধরন অমূল পালটে যায় । এখন ভারতে দানাশয্য , ডাল এবং তৈলবীজের মােট ফলনের প্রায় ৮০ % হয় এই অঞ্চলগুলিতে । এই বিপ্লব ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকপ্লনায় ( ১৯৮০-৮৫ ) ঘটে ছিল । প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আমলে তাঁর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যাম পিত্রাদার উদ্যোগে তৈলবীজের উৎপাদন , প্রক্রিয়াকরণ ও পরিচালন ব্যবস্থার কাম্যতম ব্যবহারের লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল ‘ তৈলবীজ প্রযুক্তি মিশন ।
৬. নীল বিপ্লব: ও নীল বিপ্লব বলতে বিজ্ঞানসম্মত প্রথায় মাছের চাষকে বােঝায় । বিগত কয়েক দশক ধরে উন্নত পরিকাঠামাের সাহায্যে মাছের চাষের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে । জলের গুণগত মান বজায় রাখা , নিয়মিত পুষ্টি যােগান , উন্নত পরিচালন ব্যবস্থা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়ােগে নীল বিপ্লব বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে সফল হয়েছে । ভারতে নীল বিপ্লব সংঘটিত হয় ড . অরুপ কৃয়নন - এর নেতৃত্বে । তাই তাকে ‘ নীল বিপ্লবের জনক বলা হয় । অপ্রদেশের নেলােরকে বলা হয় ভারতের ‘ চিংড়ির রাজধানী ।
৭. ধুসর বিপ্লব ( Grey Revolution ) ; পশুর পশম উৎপাদনের অভূতপূর্ব উন্নতি বা সার ( Fertiliser ) উৎপাদন বৃদ্ধিকে ধূসর বিপ্লব বলে ।
৮. গােলাপী বিপ্লব ( Pink Revolution ) : চিংড়ি ( Shrimp ) বা পিয়াজ বা ফার্মাকিউটিক্যালের উৎপাদনের বিপুল পরিমাণের বৃদ্ধিকে গােলাপী বিপ্লব বলে ।
৯. বাদামী বিপ্লব ( Brown Revolution ) : অপ্রচলিত শক্তি বা মশলা বা কফির উৎপাদন বৃদ্ধিকে বােঝায় ।
১০ , স্বর্ণালী বিপ্লব ( Golden Revolution ) : ফল ( Fruits ) বা আপেলের উৎপাদন বা হরটিকালচারের বৃদ্ধিকে স্বর্ণ বিপ্লব বলা হয় ।
১১. লাল বিপ্লব ( Red Revolution ) : মাংস ও টমােটার উৎপাদন বৃদ্ধি লাল বিপ্লব হিসাবে পরিচিত । তুমি তা
১২ কৃষ্ণ বিপ্লব ( Black Revolution ) : খনিজ দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকে ( বিশেষত ক্রুড অয়েল ) কালাে বিপ্লব বলা হয় । হে
১৩ , রৌপ্য বিপ্লব ( Silver Resolution ) : মুরগি - হাঁস প্রভৃতির ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি রৌপ্য বিপ্লব নামে পরিচিত ।
১৪. গােল বিপ্লব ( Round Revolution ) : আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিকে গােল বিপ্লব বলা হয় ।
১৫. বেনবাে রেভােলিউশান ( Rainbox_Revolution ) : কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষিনীতি ( ২০০০ সলে ) -র মূল লক্ষ্য ছিল স্থায়ীভাবে কৃষি কাজ সম্পন্ন করা । একে রেনবাে রেভেলিউশান বলে । এই বিপ্লবের মধ্যে সবুজ , সাদা , হলুদ , নীল , লাল , সােনালি , ধূসর , কালাে , বদামি ইত্যাদি বিপ্লবগুলি অন্তর্ভুক্ত । প্রধানত জৈব কৃষি পদ্ধতির সহায়তা নিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে সুস্থায়ীভাবে উন্নয়ন ঘটানােই এই বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্য । এই বিপ্লবকে ' Food - chain Revolution ' ও বলা হয় । কারণ এর মাধ্যমে খাদ্যশস্য শাকসবজী হলমূল ইত্যাদি নষ্টের হাত
১৬ , Golden Fibre Revolution— স্বর্ণতন্তু বিপ্লব বলা হয় পাটের উৎপাদন বৃখিকে ।
১৭ , Silver Fibre Revolution- রৌপ্য তন্তু বিপ্লব বলা হয় তুলার উৎপাদন ববিকে । । থেকে রক্ষা করার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে ।
1 Comments
Pdf please
ReplyDelete