All about Longitude &Latitude
অক্ষাংশ ( Latitude )
অক্ষাংশের সংজ্ঞা :
ভূপৃষ্ঠের কোনাে স্থানবিন্দু থেকে ভূকেন্দ্র পর্যন্ত অঙ্কিত সরলরেখা পৃথিবীর নিরক্ষীয়তল বরাবর নিরক্ষরেখার সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে , সেই কৌণিক দূরত্বকে ওই স্থানটির অক্ষাংশ বলে ।
অক্ষাংশের সর্বোচ্চ মান ৯০ ° এবং সর্বনিম্ন মান ০ ° ৷
যেমন , কলকাতার অক্ষাংশ ২২৩৪ উ , বলতে বােঝায় নিরক্ষীয়তল বরাবর উত্তর দিকে কলকাতা ।
অক্ষাংশের উপাদান
( ১ ) উত্তর অক্ষাংশ : নিরক্ষরেখারউত্তরেতথাউত্তর গােলার্ধেঅবস্থিত নিম্ন অক্ষাংশ স্থানেরঅক্ষাংশ I
( ২ ) দক্ষিণ অক্ষাংশ : নিরক্ষরেখার দক্ষিণে অবস্থিত কোনাে । ০ ° -৯০ ° দক্ষিণ অক্ষাংশ ।
অক্ষরেখার সংজ্ঞা ( Parallels of Latitude ) : নিরক্ষরেখারউভয়দিকেসমমানেরঅক্ষাংশগুলিকেযুক্তকরেনিরক্ষরেখারসমাহ্বালে পূর্ব থেকেপশ্চিমদিকে বিস্তৃত পরস্পরসমান্তরাল যেসব পূর্ণবৃত্তাকারকাল্পনিক রেখাপাওয়া যায় , তাদেরঅক্ষরেখা বলে । প্রতিটি অক্ষরেখাসমান অক্ষাংশ ( সম - অক্ষ ) বিশিষ্টস্থানগুলিকেযুক্তরায় , এদেরঅপরনাম সমাক্ষরেখা ।
অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য : (Axis properties:)
১ . বিস্তার : এগুলি পৃথিবীকে পূর্ব - পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে ।
২. বৃত্তাকার : অক্ষরেখাগুলিপূর্ণবৃত্তাকৃতি কাল্পনিক রেখা এবং কোণের সমষ্টি ৩৬০ ° |
৩. অসমান দৈর্ঘ্য : পরিধি সমান নয় । নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকেহ্রাস পায় । নিরক্ষরেখায় বৃহত্তম ও দুই মেরুতে শূন্য ।
৪.সমান্তরাল : অক্ষরেখাগুলি নিরক্ষরেখার সঙ্গেও পরস্পরসমান্তরাল । তাই এদেরমধ্যে পারস্পরিকদূরত্ব সর্বদা সমান । ৫. সংখ্যা ও মান : ১ ° অন্তর ১৭৯ টি অক্ষরেখা কল্পনা করা হয়েছে । অক্ষরেখার সর্বোচ্চ মান ৮৯ ° ও সর্বনিম্ন মান ০ ° ।
৬. কেন্দ্রবিন্দু : এদের কেন্দ্রবিন্দু পৃথিবীর মেরুরেখায় থাকে । তাই এরা ক্ষুদ্ৰবৃত্ত । কেবলমাত্র নিরক্ষরেখার কেন্দ্র বিন্দু পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকে । তাইনিরক্ষরেখা হল মহাবৃত্ত । নিরক্ষরেখা ছাড়া অন্যান্য অক্ষরেখাগুলির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর চেয়ে কম ।
অক্ষরেখাগুলির মধ্যে দূরত্ব পৃথিবীর পরিধি হল ৪০০৭৫ কিমি .। আবার প্রতিটি পূর্ণবৃত্ত অক্ষরেখার কোণের সমষ্টিহল ৩৬০ ° । তাই ১ ° অক্ষরেখার পার্থক্যে রৈখিক দূরত্ব হয় ৪০০৭৫ + ৩৬০ = ১১১.৩২ কিমি বা প্রায় ১১১ কিমি বা ৬৯ মাইল ।
অক্ষরেখার গুরুত্ব ও ব্যবহার :(Axis importance and usage:)
( ১ ) অবস্থান নির্ণয় : পৃথিবীর কোনাে স্থান বা অঞল নিরক্ষরেখার কতটা উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তা বের করা যায় । নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ গােলার্ধে ভাগ করেছে ।
( ২ ) জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা : নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে সূর্যরশ্মির পতন কোণ হ্রাস পাওয়ায় উষতা কমতে থাকে । দিনরাতের দৈর্ঘ্য হ্রাসবৃদ্ধি পায় । তাই অক্ষরেখার সাহায্যে কোনাে অঞ্চলের জলবায়ুর প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায় ।
( ৩ ) সীমানা নির্ধারণ : অক্ষরেখা কোনাে দেশ বা রাজ্যের রাজনৈতিক সীমানা নির্ধারণ করে । যেমন ৪৮ ° উত্তর অক্ষরেখা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা , ১০ ° উত্তর অক্ষরেখা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সীমানা নির্দেশ করে ।
( ৪ ) তাপমণ্ডল নির্দেশ : অক্ষরেখাগুলি পৃথিবীকে তিনটি তাপমণ্ডলে ভাগ করেছে । ১.উমণ্ডল ( ০ ° —২৩ / উ . দ . ) , ২.নাতিশীতােয়ুমণ্ডল ( ২৩ /উ./ দ .৬৬ /উ./ দ . ) , ৩. হিমমণ্ডল ( ৬৬ / উ . / দ —৯০ ° উ . / দ . ) ।
অক্ষাংশ নির্ণয় :(Latitude determination:)
কোনাে স্থানের অক্ষাংশ ভূপৃষ্ঠ থেকে তিনটি পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয় ।
ক ) মেরু নক্ষত্রের সাহায্যে অক্ষাংশ নির্ণয় : রাতের বেলায় যে - কোনাে স্থান থেকে উত্তর গােলার্ধের মেরা নক্ষত্র- ধ্রুবতারা এবং দক্ষিণ গােলার্ধের মেরুনক্ষত্র - হ্যাডলির অক্ট্যান্ট - র উন্নতি সেক্সট্যান্ট কোণ সেক্সট্যান্ট , ট্রানজিটথিয়ােডােলাইট , যন্ত্র যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয় । স্থানটিতে যত ডিগ্রি কোণে মেরুনক্ষত্রকে দেখা যায় সেটিইহল স্থানটির অক্ষাংশ ।
( খ ) সূর্যের সাহায্যে অক্ষাংশ নির্ণয় : দিনের বেলা ট্রানজিট থিয়ােডােলাইট , সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতি কোণপরিমাপ করে সূত্র দ্বারা অঙ্ক কষে যে - কোনাে স্থানের অক্ষাংশ বের করা হয় । অক্ষাংশ = ( ৯০ ° -সেই স্থানের নির্দিষ্ট দিনের সূর্যের উন্নতি কোণ ) ° ওই দিনের বিষুবলম্ব । সূর্য যে গােলার্ধে থাকে সেই গােলার্ধের ম্যানবিন্দুর অক্ষাংশ নির্ণয়ে বিষুবলম্ব যােগ হয় এবং সূর্য বিপরীত গােলার্ধে থাকলে বিষুব লম্ব বিয়ােগ হয় । সূর্যনিরক্ষরেখায় থাকলে বিষুবলম্ব শূন্য হয় ।
( গ ) আধুনিক GPS . পদ্ধতি : বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রেরিত ২৪ টি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যে - কোনাে স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয়করেঅতিসহজে , অল্প সময়ে , নির্ভুলভাবে অবস্থান নির্দেশ করা হয় ।
দ্রাঘিমা ( Longitude )
দ্রাঘিমার সংজ্ঞা :(Definition of longitude:)
ভূপৃষ্ঠের কোনাে স্থানবিন্দু থেকে ভূকেন্দ্র পর্যন্ত অঙ্কিত সরলরেখা পৃথিবীর নিরক্ষীয় তল বরাবর মূল মধ্যরেখার সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে , সেই কৌণিক দূরত্বকে ওই স্থানটির দ্রাঘিমা বলে । যেমন কলকাতার দ্রাঘিমা ৮৮ ° ৩ পূর্ব বলতে বােঝায় নিরক্ষীয় তল বরাবর মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব দিকে কলকাতা ৮৮ ° ৩৩ কোণ উৎপন্ন করে ।
দ্রাঘিমারেখার সংজ্ঞা ( Meridians of Longitude ) :
মূল মধ্যরেখার উভয়দিকে * ইংরেজি সমমানের দ্রাঘিমাগুলি যুক্ত করে পৃথিবীর সুমেরু থেকে কুমেরু পর্যন্ত উত্তর - দক্ষিণে বিস্তৃত পরস্পর অসমান্তরাল যেসব অর্ধবৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা পাওয়া যায় তাদের দ্রাঘিমারেখা বলে । এটি কোনাে দেশ কতটা পূর্বে বা পশ্চিমে অবস্থিত তা নির্দেশ করে । তাই দ্রাঘিমারেখার অপর নাম দেশান্তররেখা । (
দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য :(Longitude properties)
১. উত্তর - দক্ষিণে বিস্তৃতি : দ্রাঘিমারেখা পৃথিবীকে উত্তর - দক্ষিণে বেষ্টন করে আছে ।
২. অর্ধবৃত্তাকার : দ্রাঘিমারেখাগুলি অর্ধবৃত্তাকৃতি কাল্পনিক রেখা এবং কেন্দ্রে কোণের সমষ্টি ১৮০ ° ।
৩. সমান দৈর্ঘ্য : প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার পরিধি সমান । কারণ সুমেরু বিন্দু থেকে শুরু হয়ে কুমেরুবিন্দুতে শেষ হয় । ৪. অসমান্তরাল : দ্রাঘিমারেখাগুলি পরস্পর সমান্তরাল নয় । কারণ এরাদুই মেরুতে মিলিত হয় । দ্রাঘিমারেখাগুলির মধ্যে রৈখিক দূরত্ব নিরক্ষরেখায় সবচেয়ে বেশি হয় । নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে ক্রমশ হ্রাস পেয়ে মেরু বিন্দুতে শূন্য হয় ।
৫.সংখ্যা ও মান : ১ ° অন্তর ৩৬০ টি দ্রাঘিমারেখা আঁকা হয়েছে।দ্রাঘিমারেখার সর্বোচ্চমান ১৮০ ° ও সর্বনিম্নমান ০°
৬. কেন্দ্রবিন্দু : সমস্ত দ্রাঘিমারেখার কেন্দ্রবিন্দুই হল পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু । দ্রাঘিমারেখাগুলির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের সমান । তাইদুটি বিপরীত দ্রাঘিমারেখা যােগ করলে মহাবৃত্ত তৈরি হয় ।
দ্রাঘিমারেখার গুরুত্ব : (Importance of longitude:)
( ১ ) অবস্থান নির্ণয় : পৃথিবীর কোনাে স্থান বা অঞল মূল মধ্যরেখার কতটা পূর্বে পশ্চিমে অবস্থিত তা বের করা যায় । মূল মধ্যরেখা পৃথিবীকে পূর্ব ও পশ্চিম গােলার্ধে ভাগ করেছে ।
( ২ ) সীমানা নির্ধারণ : অক্ষরেখা কোনাে দেশ বা দেশের অভ্যন্তরে রাজ্যের রাজনৈতিক সীমানা নির্ধারণ করে । যেমন ২৫ ° পূর্ব দ্রাঘিমারেখালিবিয়া ও মিশরের , ১২০ ° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদা রাজ্যের সীমানা নির্দেশ করে ।
( ৩ ) সময় নির্ণয় : দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে পৃথিবীর কোনাে জায়গার স্থানীয় সময় বের করা যায় । প্রমাণ সময় নির্ধারণের দ্রাঘিমারেখা গুরুত্বপূর্ণ । ৮২ ° ৩৫ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার ও মূল মধ্যরেখার স্থানীয় সময় যথাক্রমে ভারতের ও পৃথিবীর প্রমাণ সময় ।
দ্রাঘিমা নির্ণয় : (Diagnosis of longitude:)
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩ টি পদ্ধতিতে দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয় ।
( ১ ) সময়ের পার্থক্যের সাহায্যে দ্রাঘিমা নির্ণয় : -
পৃথিবী ২৪ ঘণ্টায় একবার পাকখায় । আবার পৃথিবীর মােট দ্রাঘিমা ৩৬০ ° | তাই ১ ” দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয়া ও মিনিট ( ২৪ x ৬০ মি , +৩৬০ = ৪ মি . ) । একইভাবে দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় ৪ সেকেন্ড ( ৪ x ৬০ সে . + ৬০ সে . = ৪ সে . ) । দুটি স্থানের স্থানীয় সময় ও একটি স্থানের দ্রাঘিমা জানা থাকলে অন্য স্থানটির দ্রাঘিমা অঙ্ককষে নির্ণয় করা যায় ।
( ২ ) গ্রিনিচের সময়ের সাহায্যে দ্রাঘিমা নির্ণয় :
যে - কোনাে স্থানের সুর্যের উন্নতি কোণের ভিত্তিতে নির্ণীতস্থানীয় সময়ও গ্রিনিচের ( ০ ) ক্রোনােমিটারে নির্দেশিত সময়ের পার্থক্য বের করে দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায় । স্থানটির সময় ক্রোনােমিটার অপেক্ষা বেশি হলে স্থানটি পূর্ব দ্রাঘিমায় এবং কম হলে পশ্চিম দ্রাঘিমায় অবস্থান করে ।
( ৩ ) আধুনিক G.Ps. পদ্ধতি :
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রেরিত ২৪ টি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যে - কোনাে স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয় করে অতি সহজে , অল্প সময়ে , নির্ভুলভাবে অবস্থান নির্দেশ করা হয় ।
0 Comments