শব্দ ( Sound )
![]() |
what is sound? Characteristics of Sound Waves& sound produced application in bengali |
সংজ্ঞা
: কোনো কম্পনশীল বস্তু থেকে উৎপন্ন যে শক্তি কোনো স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে তরঙ্গের আকারে বিস্তার লাভ করে আমাদের কানে এসে পৌঁছায় ও মস্তিষ্কে এক বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি করে , তাকে বলে শব্দ ।
শব্দের উৎস (
Sources of Sound ) :
কম্পনশীল বস্তু থেকে শব্দ উৎপন্ন হয় । তাই যে - কোনো কম্পনশীল বস্তুই শব্দের উৎসরূপে কাজ করে । শব্দের উৎসকে স্বনক বলে । শব্দ বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষায় টিউনিং কর্ক বা সুরশলাকাকে শব্দের উৎসরূপে ব্যবহার করা হয় ।
বিভিন্ন প্রকার শব্দ (
Different Types of Sound ) :
1 . শ্রুতিগোচর শব্দ : শব্দ উৎসের কম্পন সেকেন্ডে 20 থেকে 20000 বারের মধ্যে হলে , ওই বস্তু থেকে উৎপন্ন শব্দ আমরা শুনতে পাই । এইরূপ শব্দকে বলে শ্রুতিগোচর শব্দ ।
2. শব্দোত্তর শব্দ : শব্দ উৎসের কম্পন সেকেন্ডে 20000 বারের বেশি হলে , ওই বস্তু থেকে উৎপন্ন শব্দ আমরা শুনতে পাই না । এইরূপ শব্দকে শব্দোত্তর শব্দ বলে ।
3. শব্দেতর শব্দ : শব্দ উৎসের কম্পন সেকেন্ডে 20 বারের কম হলে , ওই বস্তু থেকে উৎপন্ন শব্দ আমরা শুনতে পাই না । এইরূপ শব্দকে শব্দেতর শব্দ বলে ।
শব্দ বিস্তারের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন ( Necessity of Material Medium for propagation of Sound
) :
শব্দ বিস্তারের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন । কম্পনশীল বস্তু থেকে শব্দ তরঙ্গের আকারে জড় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে বিস্তার লাভ করে আমাদের কানে এসে পৌঁছায় এবং মস্তিষ্কে এক বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি করে । ফলে আমরা শব্দ শুনতে পাই । এই জড় মাধ্যম কঠিন , তরল বা গ্যাসীয় হতে পারে । মাধ্যম না - থাকলে অর্থাৎ শূন্যস্থানের মধ্য দিয়ে শব্দতরঙ্গের বিস্তার হয় না ।
তরঙ্গ ও শব্দতরঙ্গ ( Wave and Sound Wave ) :
সংজ্ঞা : তরঙ্গ হল এমন এক ধরনের আলোড়ন যা জড় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় , অথচ মাধ্যমের কণাগুলির কোনো অগ্রগতি হয় না ।
তরঙ্গের প্রকারভেদ
( Types of Wave ) :
তরঙ্গ দু - প্রকার । যেমন— ( 1 ) অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ( Longitudinal wave )
( 2 ) তির্যক তরঙ্গ ( Transverse wave )
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
:
জড় মাধ্যমের কণাগুলির কম্পনের অভিমুখ ও মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়া তরঙ্গের গতির অভিমুখ যদি পরস্পর সমান্তরাল হয় , তবে ওই তরঙ্গকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে
ব্যাখ্যা :
এই ধরনের তরঙ্গ মাধ্যমের ঘনীভবন ও তনুভবন - এর দ্বারা মাধ্যমের মধ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যায় ।কঠিন , তরল বা গ্যাসীয় সব মাধ্যমেই এই তরঙ্গ অগ্রসর হতে পারে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , শব্দতরঙ্গ একধরনের অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ।
2. তির্যক বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ :
জড় মাধ্যমের কম্পমান কণাগুলির কম্পনের অভিমুখ ও মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়া তরঙ্গের গতির অভিমুখ যদি পরস্পর লম্ব হয় , তবে ওই তরঙ্গকে তির্যক বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে । ব্যাখ্যা : এই ধরনের তরঙ্গে তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদ সৃষ্টি হয় ।
তির্যক তরঙ্গ কঠিন ও তরল মাধ্যমেই চলাচল করতে পারে । জলে ঢিল ছুড়লে তির্যক তরঙ্গ সৃষ্টি হয় ।
তরঙ্গসম্পর্কিত কয়েকটি সংজ্ঞা :
1. পূর্ণ তরঙ্গ
( A complete wave ) :
কোনো মুহূর্তে তরঙ্গের উপর অবস্থিত পরপর দুটি সমদশাসম্পন্ন কণার মধ্যবর্তী তরঙ্গকে একটি পূর্ণতরঙ্গ বলে । তির্যক তরঙ্গের ক্ষেত্রে পরপর দুটি সমদশাসম্পন্ন কণা অর্থাৎ পরপর দুটি তরঙ্গ শীর্ষ অথবা পরপর দুটি তরঙ্গপাদের মধ্যবর্তী তরঙ্গ এবং অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে পরপর দুটি ঘনীভবন অথবা পরপর দুটি তনুভবনের সমন্বয়ে গঠিত তরঙ্গই হল একটি পূর্ণ তরঙ্গ ।
2 তরঙ্গদৈর্ঘ্য ( Wave length ) :
একটি পূর্ণ তরঙ্গের দৈর্ঘ্যকে , অর্থাৎ পরপর দুটি সমদশাসম্পন্ন কণার মধ্যবর্তী সরলরৈখিক দূরত্বকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে
3. পর্যায়কাল ( Period ) ঃ
একটি পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি হতে যে সময় লাগে , তাকে পর্যায়কাল ( T ) বলে । অথবা তরঙ্গসৃষ্টিকারী যে - কোনো কণা মাধ্যমের মধ্যে যতগুলি পূর্ণ স্পন্দন সৃষ্টি করে তাকে পর্যায়কাল ( T ) বলে ।
4 . কম্পাঙ্ক :
একক সময়ে যতগুলি পূর্ণতরঙ্গ সৃষ্টি হয় , তাকে বলে কম্পাঙ্ক ( n ) । অথবা তরঙ্গ সৃষ্টিকারী কোনো কনা একক সেকেন্ডে মাধ্যমের ভিতর যতগুলি পূর্ণ স্পন্দন সৃষ্টি করে তাকে কম্পাঙ্ক ( n ) বলে ।
5.কম্পাঙ্কের একক ঃ
কম্পাঙ্কের একক সাইকেলস প্রতি সেকেন্ড ( C.P.S ) বা হার্জ ( Hz ) । 5. বিস্তার ( Amplitute ) : তরঙ্গ সৃষ্টিকারী কম্পনশীল বস্তুকণা তার সাম্য অবস্থান থেকে দক্ষিণে অথবা বামে সর্বাধিক যে দূরত্ব যায় , তাকে বলে ওই তরঙ্গের বিস্তার ।
6. তরঙ্গবেগ ( Wave velocity ) :
এক সেকেন্ডে তরঙ্গ যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে বলে ওই তরঙ্গের ভরঙ্গগে ।
শব্দের বেগ : 0 °
C উষ্ণতায় বায়ুমাধ্যমে শব্দের বেগ 332 মিটার / সেকেন্ড । তরল মাধ্যমে শব্দের বেগ গ্যাসীয় মাধ্যম অপেক্ষা বেশি । আবার কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ তরল মাধ্যম অপেক্ষা বেশি ।
স্বাভাবিক কম্পন এবং পরবশ কম্পন ( Natural and Forced Vibration ) :
1. স্বাভাবিক কম্পন ঃ
কোনো বস্তুকে প্রথমে বাহ্যিক বলের দ্বারা কম্পিত করে , বাহ্যিক বল অপসারিত করলে , বস্তুটি তার নিজস্ব কম্পাঙ্কে কম্পিত হতে থাকে । বস্তুর এই ধরনের কম্পনকে স্বাভাবিক কম্পন বলে ।
2 পর্যাবৃত্ত বল ও পরবশ কম্পন ( Period Force and Forced vibration ) ■
পর্যাবৃত্ত বল ঃ
যে বলের মান ও অভিমুখ সময়সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আবার এক হয়ে যায় , ওই বলকে পর্যাবৃত্ত বল বলা হয় এবং পর্যাবৃত্ত বলের অধীনে বস্তুর গতিকে পর্যাবৃত্ত গতি বলে ।
■ পরবশ কম্পন ঃ কোনো বস্তুর ওপর বাহ্যিক কোনো পর্যাবৃত্ত বল ক্রিয়া করলে প্রথমে বস্তু নিজস্ব কম্পাঙ্কে কম্পিত হলেও কিছু সময় পর বস্তুটি তার উপর ক্রিয়াশীল পর্যাবৃত্ত বলের কম্পাঙ্কেই কম্পিত হয় । বস্তুর এই কম্পনকে পরবশ কম্পন বলে । উদাহরণ — গিটার , বেহালা , সেতার প্রভৃতি তারের বাদ্যযন্ত্রে কয়েকটি তারকে ফাঁপা কাঠের বাক্সে আটকে রেখে বাদ্যযন্ত্রগুলি তৈরি করা হয় । এর কারণ তারগুলি কম্পিত হলে কাঠের বাক্স ও ওর মধ্যস্থ বায়ুস্তরের পরবশ কম্পন হয় , ফলে শব্দের প্রাবল্য বাড়ে ।
শব্দের প্রতিফলন (
Reflection of Sound ) :
সংজ্ঞা
:শব্দতরঙ্গ যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হয় , তখন ওই আপতিত শব্দ তরঙ্গের কিছু অংশ দ্বিতীয় মাধ্যমের তল থেকে দিক পরিবর্তন করে সরলরেখায় আবার প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে । এই ঘটনাকে শব্দের প্রতিফলন বলে ।
শব্দের প্রতিফলনের সূত্র দুটি হল :
( 1 ) আপতিত শব্দরশ্মি , প্রতিফলিত শব্দরশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অতিলম্ব একই সমতলে থাকে ।
( 2 ) আপতন কোণ এবং প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান । শব্দের প্রতিফলনের ব্যাবহারিক প্রয়োগ : শব্দের প্রতিফলনের ঘটনা প্রয়োগ করে স্পিকিং টিউব , গ্রামোফোনের চোঙ , ডাক্তারদের স্টেথোস্কোপ , বধিরদের শ্রবণযন্ত্র তৈরি করা হয় ।
প্রতিধ্বনি ( Echo )
সংজ্ঞা
: প্রতিফলিত শব্দকে মূল শব্দ থেকে পৃথকভাবে শোনা গেলে ওই প্রতিফলিত শব্দকে প্রতিধ্বনি বলে । প্রতিধ্বনি শোনার জন্য প্রতিফলকের ন্যূনতম দূরত্ব :
1. ক্ষণস্থায়ী শব্দ ঃ যে - কোনো ক্ষণস্থায়ী শব্দের রেশ আমাদের কানে 1/10 সেকেন্ড ধরে বজায় থাকে । এই সময়কালকে শব্দ নির্বন্ধ বলে
2. বোধগম্য শব্দ ঃ মানুষ সেকেন্ডে ত্রিমাত্রিক ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রে পাঁচটির বেশি পদাংশ উচ্চারণ করতে পারেনা । সুতরাং একমাত্রিক , দ্বিমাত্রিক
, প্রতিধ্বনি শুনতে গেলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব যথাক্রমে 99.6 মিটার ইত্যাদি হয় ।
প্রতিধ্বনির ব্যাবহারিক প্রয়োগ ঃ
শব্দের প্রতিধ্বনিকে কাজে লাগিয়ে
( i ) বাতাসের বেগ ,
( ii ) সমুদ্রের গভীরতা
( iii ) উড়োজাহাজের উচ্চতা প্রভৃতি নির্ণয় করা যায় ।
সুর বা স্বর ( Tone and Note ) :
সুর ঃ একটি মাত্র নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দকে সুর বলে ।
■■■ সুরশলাকার কম্পনের ফলে যে শব্দ উৎপন্ন হয় তাতে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ থাকে । তাই সুরশলাকা থেকে উৎপন্ন শব্দ হল সুর ।
স্বর ঃ একাধিক কম্পাঙ্কের সুরের মিলনে যে শব্দ উৎপন্ন হয় তাকে স্বর বলে । সেতার , বেহালা , গিটার প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র থেকে যে শব্দ উৎপন্ন হয় তাতে একাধিক নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ মিশে থাকে । তাই ওই বাদ্যযন্ত্রগুলি থেকে নির্গত শব্দ স্বর ।
মূলসুর ( Fundamental tone ) : কোনো স্বরের মধ্যে উপস্থিত সুরগুলির মধ্যে যে সুরের কম্পাঙ্ক সবচেয়ে কম , সেই সুরকে মূলসুর বলে ।
উপসুর ( Over tone ) : কোনো স্বরের মধ্যে উপস্থিত সুরগুলির মধ্যে মূলসুর ছাড়া অন্য সুরগুলিকে উপসুর বলে ।
সমমেল ( Harmonics ) : স্বরে উপস্থিত উপসুরগুলির মধ্যে যে সকল সুরের কম্পাঙ্ক মূল সুরের কম্পাঙ্কের সরল গুণিতক , তাদের সমমেল বলে ।
অষ্টক ( Octave ) : কোনো একটি সুরের কম্পাঙ্ক , অপর একটি সুরের কম্পাঙ্কের দ্বিগুণ হলে , প্রথম সুরটিকে দ্বিতীয় সুরের অষ্টক বলে । ■■■ একটি অর্গানে উপস্থিত 232 , 250 , 464 , 636 , 700 , 928 কম্পাঙ্কবিশিষ্ট সুর আছে । উপস্থিত এই সুরগুলির মধ্যে 232 কম্পাঙ্কবিশিষ্ট সুরটি সবচেয়ে ছোটো । সুতরাং 232 কম্পাঙ্কবিশিষ্ট সুরটি হল মূলসুর । এই অর্গানে মূলসুর ছাড়া উপস্থিত 250 , 464 , 696 , 700
, 928 কম্পাঙ্কবিশিষ্ট সুরগুলি হল উপসুব । উপসুরগুলির মধ্যে 464 , 696 এবং 928 কম্পাঙ্কবিশিষ্ট সুরগুলি মূলসুর - এর কম্পাঙ্ক 232 এর সরল গুণিতক হওয়ার ওই সুরগুলি হল সমমেল । আবার 464 কম্পাঙ্কবিশিষ্ট সুরটি হল মূলসুর 232 - এর দ্বিগুণ । সুতরাং , এটি মূলসুরের অষ্টক ।
সুরযুক্ত এবং সুরবর্জিত শব্দ ( Musical Sound and Noise ) :
1 . সুরযুক্ত বা সুরময় শব্দ
: স্বনকের নিয়মিত , পর্যাবৃত্ত ও ধারাবাহিক কম্পনের ফলে শ্রুতিমধুর শব্দ উৎপন্ন হয় । এই শ্রুতিমধুর শব্দকে সুরযুক্ত শব্দ বা সুরময় শব্দ বলে । বেহালা , সেতার , গিটার প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে স্বনকের নিয়মিত ও পর্যাবৃত্ত গতির ধারাবাহিক কম্পন সৃষ্টি করে । বাদকরা সুরযুক্ত শব্দ সৃষ্টি করেন । উৎপন্ন শব্দ শ্রুতিসুখকর হওয়ায় এই শব্দকে সুরযুক্ত শব্দ বলা হয় ।
2. সুরবর্জিত শব্দ ঃ স্বনকের অনিয়মিত , অপর্যাবৃত্ত ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনের ফলে শ্রুতিকটু শব্দ উৎপন্ন হয় । এই শ্রুতিকটু শব্দকে সুরবর্জিত শব্দ বলে । গাড়ির হর্ন , পটকার আওয়াজ , বাজ পড়ার শব্দ - এসব ক্ষণস্থায়ী শব্দ হল সুরবর্জিত শব্দ ।
সুরযুক্ত শব্দের বৈশিষ্ট্য ঃ সুরযুক্ত শব্দের তিনটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় ।
( 1 ) প্রাবল্য বা তীব্রতা ( 2 ) তীক্ষ্ণতা ( 3 ) গুণ বা জাতি ।
1 . প্রাবল্য
( Loudness ) : শব্দ বিস্তারের অভিমুখে কোনো উল্লম্ব তলের প্রতি একক ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট স্থানের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ শব্দশক্তি প্রবাহিত হয় , তত পরিমাণ শব্দশক্তিকে শব্দের প্রাবল্য বা তীব্রতা বলে । অর্থাৎ প্রতি একক ক্ষেত্রফলে এক সেকেন্ড সময়ে প্রবাহিত শব্দশক্তির পরিমাণই হল শব্দের প্রাবল্য বা তীব্রতা । শব্দের প্রাবল্য নির্ভর করে স্বনকের আকার , স্বনক থেকে শ্রোতার দূরত্ব , স্বনকের কম্পনবিস্তার , মাধ্যমের ঘনত্ব , অনুনাদী বস্তুর উপস্থিতি ও মাধ্যমের গতির উপর ।
2. তীক্ষ্ণতা
( Pitch ) : সুরযুক্ত শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য একই তীব্রতার চড়া সুরকে খাদের সুর থেকে পৃথক করা যায় , তাকে সুরযুক্ত শব্দের তীক্ষ্ণতা বলে । তীক্ষ্ণতা কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক । স্বনকের কম্পাঙ্ক যত বেশি হবে তীক্ষ্ণতা তত বেশি হয় ।
3. গুণ বা জাতি
( Quality or Timbre ) : সুরযুক্ত শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বা উৎস থেকে উৎপন্ন একই প্রাবল্য ও তীক্ষ্ণতাবিশিষ্ট স্বরগুলিকে পৃথক পৃথকভাবে বোঝা যায় , সেই বৈশিষ্ট্যকে স্বরের গুণ বা জাতি বলে । যেমন — সেতার , বীণা ও গিটারে উৎপন্ন একই প্রাবল্য ও তীক্ষ্ণতাবিশিষ্ট সুরগুলিকে না - দেখে বলা যায় সুরটি কোন্ বাদ্যযন্ত্রের । কারণ এদের প্রত্যেকের গুণ বা জাতি পৃথক । স্বরের গুণ বা জাতি ( i ) মূলসুরের সঙ্গে উপসুরের সংখ্যা ( ii ) উপসুরগুলির কম্পাঙ্ক ( iii ) সুরগুলির আপেক্ষিক প্রাবল্যের উপর নির্ভর করে ।
শব্দদূষণ ( Noise Pollution ) :
সংজ্ঞা : সহনশীলতার সর্বাধিক সীমা ছাড়িয়ে নির্গত অবাঞ্ছিত শব্দ যখন শ্রুতিসীমার অতিরিক্ত এবং নির্গত অবাঞ্ছিত শব্দ যখন মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিসাধনকারী , জনজীবন বিপন্নকারী হয়ে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করে , তাকে শব্দদূষণ বলে ।
■ শব্দদূষণের উৎস
: শব্দদূষণের উৎসগুলি হল —– ( i ) যানবাহন ( iii ) কলকারখানা ( iii ) সামাজিক ও ধর্মীয় কারণ প্রভৃতি ।
জনস্বাস্থ্যের উপর শব্দদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব
: জনজীবনে শব্দদূষণের যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব আছে সেগুলি হল ,
( i ) শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের অবসাদ
( ii ) বধিরত্ব
( iii শ্রবণে বাধা
( iv ) অস্বস্তি
( v ) কর্মদক্ষতার হ্রাস
( vi ) বিভিন্ন প্রকার শারীরবৃত্তীয় ক্ষতি প্রভৃতি ।
শব্দদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের উপায়
:
( i ) উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে উৎসস্থলেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
( ii ) আইন করে শব্দদূষণ কমানো যায় ।
iii ) ব্যক্তিগত ও জনশিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করে শব্দদূষণ কমানো যায় ।
0 Comments