এক নজরে ভারতের নদনদী
ভারতের মোটজলসম্পদহল ১৮৬৯ ঘনকিমি । ১১২২ ঘনকিমিজলব্যবহারযোগ্য , যারমধ্যে ৬৯০ ঘনকিমি ( ৬১.৬ % ) ভূপৃষ্ঠস্থজল ও ৪৩২ ঘনকিমি ভূগর্ভস্থ জল ( ৩৮.৪ % ) । ভূপৃষ্ঠস্থ জলসম্পদ : নদনদী , হ্রদ , জলাশয় , খালগুলিতেভূপৃষ্ঠেরস্বাদুজল রয়েছে । গঙ্গাহল ভারতের বৃহত্তমভূপৃষ্ঠীয়জলের আধার । এছাড়া সিন্ধু , ব্রহ্মপুত্র , বরাক , মহানদী , ব্রাহ্মণী , গোদাবরী , কৃষ্ণা , কাবেরী নদী বিপুল পরিমাণে ভূপৃষ্ঠ জল সরবরাহ করে
ভূগর্ভস্থ জলসম্পদ : National Commission
on Agriculture ( 1979 ) –
এরমতে দেশের মোট ভৌম জলসম্পদ ৬৭ মিলিয়ন হেক্টর মিটার ( MHM ) , যার ৩৫ MHM ব্যবহারযোগ্য । উত্তর - পূর্বের রাজ্য , রাজস্থান , ওড়িশাতে ভৌম জলসম্পদ খুব কম ।
নদনদী
: ১৪ টি বড়ো ও ৪৪ টি মাঝারিনদী অববাহিকা সারা দেশকে সুপ্রাচীন কাল থেকে বিধৌত করে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছে । সন্তান স্নেহে ভারতবাসীদের লালন পালন করেছে । তাই ভারতকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয় । নদী ব্যবস্থা বিন্ধ্যপর্বতনদীগুলিকে ২ টিপ্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে । ( লুনি , ঘাঘর , রূপনগর , মেধাহল অন্তর্বাহিনী নদী )
১. উত্তর ভারতের নদী ব্যবস্থা : গঙ্গা , সিন্ধু , ব্রহ্মপুত্র , গোমতী , বরাক , মণিপুর , দয়াং , দিখু , কালাদান , সিমসাং নদী ।
২. দক্ষিণ ভারতের নদী ব্যবস্থা : পূর্ববাহিনী : বঙ্গোপসাগরে পতিত মহানদী , গোদাবরী , কৃষ্ণা , কাবেরী , পেন্নরু , ভাইগাই ; পশ্চিমবাহিনী : আরবসাগরে পতিত নর্মদা , তাপি , সবরমতী , মাহি , সরাবতী , উলহাস , নেত্রবতী , সাবিত্রী , মাণ্ডবী , পেরিয়ার নদী ; উত্তরবাহিনী : যমুনা ও গুঙ্গাতে পতিত চম্বল , বেতোয়া , কেন , শোন ।
গঙ্গা নদী ( মোট দৈর্ঘ্য ২৫২৫ কিমি
, ভারতে ২০৭১ কিমি
) :
গঙ্গা ভারতের পবিত্র , প্রধান ও দীর্ঘতম নদী । অববাহিকার ক্ষেত্রমান ভারতে বৃহত্তম ( ৮.৬ লক্ষবর্গকিমি ) । ভারতের মোট ক্ষেত্রমানের ২৬ % । উচ্চ , মধ্য ও নিম্নগতি যুক্ত গঙ্গা ভারতের আদর্শ নদী । দেশের মোট জলপ্রবাহের ১৪ % জল গঙ্গা নদী বহন করে উৎস
উচ্চগতি : উত্তরাখণ্ডেকুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা ৭০১০ মিটার ) থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী হল গঙ্গার উৎস নদী । সতোপন্থ হিমবাহ থেকে উৎপন্ন অলকানন্দার সঙ্গে রুদ্রপ্রয়াগে মন্দাকিনীমিলিতহয়েঅলকানন্দা নামে দেবপ্রয়াগের কাছে ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে । দেবপ্রয়াগের পর থেকে ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিতপ্রবাহ গঙ্গা নামে আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে হরিদ্বারে সমভূমিতে নেমেছে । উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৮০ কিমি পথ গঙ্গার উচ্চগতি ।
উপনদী : পিণ্ডার , ধৌলিগঙ্গা , মন্দাকিনী ও অলকানন্দা ।
মধ্যগতি : হরিদ্বার থেকে প্রথমে দক্ষিণ - পূর্ব ও পরে পূর্বদিকে অসংখ্য বাঁক সৃষ্টি করে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত । হরিদ্বার থেকে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ কিমি প্রবাহ গঙ্গার মধ্যগতি । উপনদী : বাম তীরে রামগঙ্গা , গোমতী , ঘর্ঘরা , গণ্ডক , কোশী , বুড়িগণ্ডক এবং ডান তীরে যমুনা , শোন । যমুনেত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন ১৩৭৬ কিমি দীর্ঘযমুনা এলাহাবাদে গঙ্গাতে মিলিত । যমুনা গঙ্গার দীর্ঘতম উপনদী :চম্বল , বেতোয়া , কেন , সিন্দ যমুনার উপনদী ।
● নিম্নগতি : রাজমহল পাহাড় থেকে দক্ষিণমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে ধুলিয়ানের কাছে দুটি শাখায় ভাগ হয়েছে । প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে । পরে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । গৌণ শাখা পশ্চিমবঙ্গেভাগীরথী - হুগলি ( নবদ্বীপ পর্যন্ত ভাগীরথী , তারপরহুগলি ) নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে সাগরদ্বীপে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে । ভাগীরথী - হুগলি ও পদ্মা বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে । রাজমহল থেকে মোহানা পর্যন্ত ৫২০ কিমি পথ গঙ্গারনিম্নগতি ।
উপনদী : বামতীরেমহানন্দা , আত্রাই , কুলিক এবং ডানতীরেঅজয়
, দামোদর , ময়ূরাক্ষী , রূপনারায়ণ । শাখানদী : ভাগীরথী - হুগলি , মাথাভাঙা , চূর্ণী , জলঙ্গী , বিদ্যাধরী , কালিন্দী , মাতলা , ইচ্ছামতী
সিন্ধুনদ
( মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮০ কিমি , ভারতে ৭০৯ কিমি ) :
উত্তর - পশ্চিম ভারতের প্রধান নদীহলসিন্ধু।তিব্বতে মানস সরোবরের কাছে কৈলাস পর্বতেরহিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে সিঙ্গখাবাব নামে তিব্বতের মধ্য দিয়ে ২৫৭ কিমি উত্তর - পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।জম্মু ও কাশ্মীররাজ্যেজাস্করও লাদাখ পর্বতের মাঝখান দিয়ে ৫৬০ কিমিউত্তর - পশ্চিমে সিন্ধু নামে প্রবাহিত হয়েছে । বুঞ্জির কাছে দক্ষিণ দিকে বেঁকে ১৪৯ কিমি পথ অতিক্রম করে পাকিস্তানেপ্রবেশ করেছে । ১৯২৪ কিমি দক্ষিণ - পশ্চিমবাহিনী হয়ে করাচিরকাছেআরবসাগরে পড়েছে ।
উপনদী : বামতীরে শতদ্রু , ইরাবতী , বিপাশা , চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা ভারতে পাঞ্জাব সমভূমি গঠন করেছে । ডান তীরে শায়ক , সিগার , গিলগিট ।
ব্রহ্মপুত্র নদ ( মোট দৈর্ঘ্য ২৯০০ কিমি , ভারতে ৮৮৫ কিমি ) : পূর্বভারতের প্রধান নদীহল ব্রহ্মপুত্র । তিব্বতে কৈলাস পর্বতের চেমায়ুংদুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে সাংপোনামে তিব্বতহিমালয়ের সমান্তরালে ১৮০০ কিমি পথ অতিক্রম করেছে । নামচাবারওয়ার কাছে গভীর গিরিখাতেহিমালয় ছেদকরে অরুণাচলেপ্রবেশ করেছে । সিয়ংও দিহং নামেদক্ষিণ ও দক্ষিণ - পশ্চিমে সাদিয়া পর্যন্ত ১৩৫ কিমিপ্রবাহিত । এখানে দিবংও লোহিত নদী মিলিত হয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র নামে অসম উপত্যকারমধ্য দিয়ে ৭২০ কিমিদক্ষিণ - পশ্চিমেপ্রবাহিত হয়েছে । ধুবড়িতেদক্ষিণমুখী বাঁক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে যমুনা নামে ২৭০ কিমিপ্রবাহিত হয়েছে । গোয়ালন্দে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । গঙ্গা - ব্রহ্মপুত্র নদবিশ্বেরবৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টিকরেছে । ব্রহ্মপুত্রে বহুদ্বীপ তৈরি হয়েছে । এরমধ্যে মাজুলি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ ।
উপনদী : বাম তীরে বুড়িদিহং , দিসং , ধানসিরি , কপিলি , লোহিত এবং ডান তীরে সুবর্ণসিরি , কামেং , মানস , সংকোশ , তিস্তা ।
দক্ষিণ ভারতের নদনদী ( Rivers of Southern India )
দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট । এই কারণে এখানকার সব নদীতে সারাবছর জল থাকে না । এই নদীগুলির দৈর্ঘ্যও যথেষ্ট কম । এ অঞ্চলের নদীগুলি খুবই খরস্রোতা * “ । দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিকে পূর্ববাহিনী ও পশ্চিমবাহিনী এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয় । পূর্ববাহিনী নদীগুলির মধ্যে মহানদী , গোদাবরী , কৃষ্ণা ও কাবেরী এবং পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে নর্মদা ও তাপ্তি প্রধান ।
পূবাহিনা নদনদী
মহানদী ( ৮৫৭ কিমি
. ) :
ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলার সিহাওয়ার উঁচু ভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী ছত্তিশগড় ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । এর মোহানায় বড়ো বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে । এই অঞ্চলকে ছোটো সুন্দরবন বলে । উপনদী ও শাখানদী : ব্রাক্মণী , বৈতরণী , শিওনাথ , টেল , হাঁসদেও , ইব , ম্যান্ড , জোঙ্ক প্রভৃতি মহানদীর উপনদী । ভাগবী , কুশভদ্রা , বিরূপা , কাঠজুড়ি , দয়া প্রভৃতি এর শাখানদী ।
গোদাবরী
( ১,৪৬৫ কিমি . )
: দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম এই নদী পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্রিম্বক শৃঙ্গ থেকে বের হয়ে মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে মোহানায় বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । এই নদীকে দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা বলে । উপনদী ও শাখানদী ঃ প্রাণহিতা , ইন্দ্রাবতী , মঞ্জিরা , শর্বরী , পূর্ণা প্রভৃতি গোদাবরীর প্রধান উপনদী এবং গৌতমী , বশিষ্ঠ , বৈনতেয় প্রভৃতি এর শাখানদী ।
কৃষ্ণা ( ১,৪০০ কিমি
. ) :
পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে বের হয়ে এই নদী মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । উপনদী ও শাখানদী ঃ কয়না , ভীমা , তুঙ্গভদ্রা , বেদবতী , ঘাটপ্রভা , মুসি , মালপ্রভা , পঞ্চগঙ্গা , দুধগঙ্গা প্রভৃতি কৃষ্ণার উপনদী এবং নাগবতী , ভামসধারা প্রভৃতি এর শাখানদী
কাবেরী
( ৮০৫ কিমি . ) ঃ
কর্ণাটকের ব্রহ্লগিরি পাহাড় থেকে বের হয়ে এই নদী কৰ্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । এই নদীকেও অনেকে দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা বলেন । কাবেরী নদীর বদ্বীপকে দক্ষিণ ভারতের শস্যভাণ্ডার বলে ।
উপনদী ঃ শিমসা , ভবানী , হেমবতী , অমরাবতী , কাব্বানী প্রভৃতি কাবেরীর উপনদী । অন্যান্য পূর্ববাহিনী নদী : দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য পূর্ববাহিনী নদীর মধ্যে সুবর্ণরেখা * ৭ , পেন্নার , পালার , পেন্নিয়ার , ভাইগাই , তাম্রপর্ণী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
পশ্চিমবাহিনী নদনদী ( Rivers of Westwards )
( ১
) নর্মদা ( ১,৩০০ কিমি
. ) :
মহাকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে বের হয়ে নর্মদা নদী ** বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মধ্যবর্তী গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রদেশ , মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে । এই নদীর অন্য নাম রেবা নদী এবং এর মোহানায় কোনো বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি * ৯ । হিরণ , বর্ণা , রসাং প্রভৃতি এর উপনদী ।
( ২
) তাপ্তি ( ৭২ কিমি
. ) :
মহাদেব পর্বতের মূলতাই উঁচু ভূমি থেকে বের হয়ে সাতপুরা পর্বতের দক্ষিণ দিকের গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিমে বয়ে গিয়ে এই নদী খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে । এই নদীর মোহানাতেও কোনো বদ্বীপ নেই । পূর্ণা , গিরনা , বোরি প্রভৃতি এর উপনদী ।
( ৩ ) অন্যান্য পশ্চিমবাহিনী নদী
:
সবরমতী ( ৪১৬ কিমি . ) , মাহি ( ৫৩৩ কিমি . ) , ভাদর , মাণ্ডবি , বৈতর্ন , বশিষ্ট , উলহাস , সাবিত্রী , সরাবতী , সরস্বতী , নেত্রবতী , কালিন্দী , পেরিয়ার প্রভৃতি অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছোটো ছোটো পশ্চিমবাহিনী নদী ।
0 Comments